রবিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৫ - ১৬:১৫
ইরান-সৌদি সংলাপ: মধ্যপ্রাচ্যের নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির সঙ্গে সৌদি আরবের রাজনৈতিক বিষয়ক উপ–পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাউদ বিন মোহাম্মদ আল–সাতির সাম্প্রতিক তেহরান বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক বাস্তবতায় এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। ২০২৩ সালে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পর দুই দেশের মধ্যে ধারাবাহিক উচ্চপর্যায়ের আলোচনা প্রমাণ করে যে রিয়াদ–তেহরান সম্পর্ক আর আগের মতো দূরত্বে নেই; বরং উভয়ই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমন্বিত স্বার্থকে সামনে রেখে নতুন পথ রচনা করতে আগ্রহী।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: বিগত বছরগুলোতে উভয় পক্ষই রাজনৈতিক উত্তেজনা, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং প্রক্সি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল। ফলে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন থেকে শুরু করে উপসাগরীয় অঞ্চলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালের ঐতিহাসিক পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্ককে দ্রুত গলিয়ে দেয়। এরপর থেকেই দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক, নিরাপত্তা সংলাপ এবং বাণিজ্যিক–কৌশলগত আলোচনা একটি নতুন আস্থা তৈরির ভিত্তি স্থাপন করেছে।

এবার আল–সাতির তেহরান সফর সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যু, লেবাননের রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং সিরিয়ার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। যদিও আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়নি, তবুও স্পষ্ট ইরান-সৌদি সংলাপ এখন একক ইস্যু নয়, বরং বিস্তৃত কৌশলগত বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে। এই সংলাপ কেবল দুই দেশের সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং এটি গোটা অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের ভিশন–২০৩০ সংস্কার প্রক্রিয়া এবং ইরানের কৌশলগত ও সামরিক প্রভাব উভয়ই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়েছে। অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জ্বালানি সহযোগিতা ও পর্যটনসহ বহু খাতে দুই দেশ নতুন সুযোগ দেখতে পাচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকট, লেবানন ও সিরিয়ার অনিশ্চয়তা এবং উপসাগরীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে ইরান–সৌদির সমন্বয় স্থিতিশীলতার নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে পারে।

তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। দীর্ঘ চার দশকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আস্থার ঘাটতি এবং বহিরাগত শক্তির প্রভাব যে কোনো সময় অগ্রগতিকে মন্থর করতে পারে। তবুও যে বাস্তবতা স্পষ্ট—দুই দেশই এখন সংঘাত নয়, সংলাপকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

ইরান-সৌদি আলোচনার এ ধারাবাহিকতা যদি স্থায়ী অগ্রগতি লাভ করে, তবে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাব্যবস্থায় একটি নতুন যুগের সূচনা হতে পারে—যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে সহযোগিতা, উত্তেজনার বদলে স্থিতিশীলতা, এবং বিরোধের বদলে কূটনৈতিক সমঝোতার স্থান তৈরি হবে। এই বৈঠক সেই বৃহত্তর পরিবর্তনের ইঙ্গিতই বহন করছে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha